বিংশ শতকের শেষদিকে ১৯৯৬ সালে স্যামুয়েল পি হান্টিংটনের সভ্যতার সংঘাত নামক বইটি বাজারে আসে। শুরুতে বইটি তেমন সাড়া না ফেললেও আমেরিকার টু-ইন টাওয়ারের হামলার ঘটনাটির পর তার বইটি বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। হান্টিংটনের এই তত্ত্বের খুঁটিনাটি নিয়ে আজ জানানোর চেষ্টা করবো।
প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক Samuel P. Huntington মনে করেন যে জাতি রাষ্ট্র (Nation State) এখন আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌল একক নয়।বিশ্বায়নের ফলে জাতি রাষ্ট্রের (Nation State) অবস্থান ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে , তাই ভবিষ্যতে সংঘাত সৃষ্টি হবে সভ্যতার মধ্যে, জাতি রাষ্ট্রের মধ্যে নয়।হান্টিংটনের এ ধারণা সামাজিক বিজ্ঞান , বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নে এক নব দিগন্তের সূচনা করেছে। এতদিন ভূমন্ডলীয় ও জাতিরাষ্ট্র ধারণাকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মূল্যায়ন ও বিচার বিশ্লেষণে প্রাধান্য দেয়া হতো। এখন কোন কোন পন্ডিত ও গবেষকরা সংস্কৃতির দ্বন্দ্বকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূল্যায়নের উপাদান হিসেবে বিবেচনা করছেন।

হান্টিংটনের সভ্যতাসমূহ:
হান্টিংটনের মতে বিশ্বে সংকটের মূলে থাকবে কিছু সভ্যতা। তিনি আটটি সভ্যতাকে চিহ্নিত করেছেন যারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে এবং নিজেদের সভ্যতাকে পৃথিবীর কেন্দ্র বলে মনে করে। এই আটটি সভ্যতা হল:
- ওয়েস্টার্ন বা পশ্চিমা সভ্যতা [৩৮ টি দেশ]
- কনফুসিয়ান [চীনা] সভ্যতা- ৫ টি দেশ
- ইসলামী সভ্যতা- [৫৭ টি দেশ]
- হিন্দু সভ্যতা [ভারত]
- জাপানি সভ্যতা [জাপান]
- স্লাবিক-অর্থোডক্স [সাবেক সোভিয়েত দেশগুলো]
- লাতিন আমেরিকান সভ্যতা [৩৫ টি দেশ]
- আফ্রিকান সভ্যতা -[৫০ টি দেশ]
[N.B. দেশ সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে]
কেন সংঘাত?
হান্টিংটনের মতে সভ্যতাসমূহের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে যা এক সভ্যতার মানুষকে অন্য সভ্যতার মানুষকে আলাদা করে। যেমন:-
- সভ্যতাগুলোর ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রথা এবং ধর্মীয় পার্থক্য বিরাজমান।
- সভ্যতাগুলোর মধ্যে ঈশ্বর এবং মানুষের সম্পর্ক, ছেলেমেয়ে এবং পিতামাতার সম্পর্ক, স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ রয়েছে।
- সভ্যতাসমূহের মধ্যে এই পার্থক্য শত শত বছর ধরে চলে আসছে।
- রাজনৈতিক মতাদর্শের চেয়ে সভ্যতাসমূহের মানুষজন তাদের সাংস্কৃতিক মতাদর্শকে লালন করে থাকে।
হান্টিংটনের সভ্যতার সংঘাতের ছয়দফা
সভ্যতার সংঘাতের পেছনে হান্টিংটন ছয়টি পয়েন্ট দিয়েছেন যা মূলত তার তত্ত্বটির মূলকথা। এগুলো হলো:-
- সাংস্কৃতিক পার্থক্য মৌলিক: সভ্যতাগুলোতে আলাদা আলাদা সংস্কৃতি বিদ্যমান। একজন মানুষ তার সংস্কৃতিকে সবসময় লালন করে। তাই একটি সভ্যতার সাথে অন্য সভ্যতার মানুষের সাংস্কৃতিক ব্যবধান সবসময়ই থাকে।
- সাংস্কৃতিক পার্থক্য সহজে পরিবর্তিত হয়না: এক সভ্যতার সংস্কৃতির প্রভাবে অন্য সংস্কৃতিতে পরিবর্তন সহজে আসে না। কারন সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায়না। যদি তা করা হয় তখনই সংঘাত সৃষ্টি হয়।
- বিশ্বায়ন: বিশ্বায়নের মাধ্যমে এক সভ্যতার মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি অপর সভ্যতার কাছে যাচ্ছে। ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে সকল সভ্যতাই নিজেদের মৌলিকত্ব বজায় রাখতে চাইবে যা এক ধরনের সংঘাতের সূচনা করবে।
- জাতীয় পরিচয় দুর্বল হচ্ছে: মানুষ নিজের জাতীয় পরিচয় দেওয়ার চেয়ে তার সভ্যতার পরিচয় দেওয়াটা পছন্দ করে। সহজ উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক। যদি একজন মুসলিম অন্য একটি মুসলিম দেশে যান তাহলে ঐদেশের জনগন তাকে বিদেশি ভাবার চেয়ে ইসলামি সভ্যতার মানুষ হিসেবে গ্রহন করবে। কিন্ত যদি একজন মুসলিম কোন অমুসলিম দেশে যান তবে ঐদেশ তাকে একজন বিদেশী হিসেবেই গ্রহন করবে। এভাবেই সভ্যতার আদলে বিশ্বের মানুষজন একে অপরের কাছে পরিচিত হচ্ছে যার ফলে জাতীয় পরিচর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
- ওয়েস্টার্নরা নন ওয়েস্টার্নদের কাছ থেকে হুমকী পাচ্ছে: বেশ কয়েকবার খ্রিস্টানরা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে অগ্রসর হয়েছিল। দুইবার এমন হয়েছিল যে ইউরোপে খ্রিষ্টানদের অস্তিত্ব সংকট এসেছিল।
- অর্থনৈতিক আঞ্চলিকতাবাদ: সভ্যতাসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক আঞ্চলিকতাবাদ গড়ে উঠবে। যেমন : নাফটা।
সংঘাতের প্রকারভেদ
দুই ধরণের সংঘাতের কথা হান্টিংটন উল্লেখ করেছেন। এরা হলো:-
ক্ষুদ্র সংঘাত (Micro clash)
যখন সভ্যতাগুলোর মধ্যে সম্পদ নিয়ে সংঘাত হবে তখন তা হবে ক্ষুদ্র সংঘাত বা micro clash.
বৃহৎ সংঘাত (macro clash)
যখন সভ্যতাসমূহের মাঝে মূল্যবোধ নিয়ে সংঘর্ষ হবে তখন তা হবে বৃহৎ সংঘাত (macro clash).
কে সংঘাতের সূচনা করবে?
হান্টিংটন লিখেছেন যে তিনটি সভ্যতার মধ্যে সংঘাত বেশি হবে। এরা হলো:-
- খ্রিষ্টান(ওয়েস্টার্ন সভ্যতা)
- স্লাবিক-অর্থোডক্স
- ইসলামী সভ্যতা।
বাকি সভ্যতাগুলো ধীরে ধীরে অন্য সভ্যতাগুলোর সাথে মিশে যাচ্ছে।
সভ্যতার সংঘাত pdf download
Title | দ্য ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনস অ্যান্ড দ্য রিমেকিং অব ওয়াল্ড অর্ডার |
Author | স্যামুয়েল পি. হ্যান্টিংটন , ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ |
Publisher | অনিন্দ্য প্রকাশ |
ISBN | 9789844141117 |
Edition | 3rd Edition, 2010 |
Number of Pages | 414 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
You May Like
বর্তমানে অনেক মহলেই বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে হান্টিংটন ও সমমনা পাশ্চাত্যের বুদ্ধিজীবিদের অতিমাত্রার সন্দেহভাজন দৃষ্টিভঙ্গীর বিপরীতে সহযোগিতা ও সমঝোতার একটি ধারনাও ক্রমশ: লাভ করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে দরকার সভ্যতাসমূহের মধ্যে গভীর সংযোগ যা জাতিসংঘ 2001 সাল কে সভ্যতাসমূহের মধ্যে সংলাপের বছর হিসেবে ঘোষণা করে উক্ত সভ্যতাকেই সমর্থন করছে।
Clash of civilizations in Short
By [সৌরভ দেবনাথ সাগর] [MBA, SUST]